Header Ads Widget

Responsive Advertisement

নতুন খামারিদের জন্য গরু নির্বাচন

গরু নির্বাচন


সঠিক জাতের গরু নির্বাচনের উপর একটি সফল খামার গড়ে উঠে।  একজন নতুন খামারি হিসেবে আপনি কি ধরনের গরু দিয়ে খামার শুরু করলে শুরুতেই লাভজনক হবে সেটা জানতে হবে। 

নতুন খামার কি ধরনের গরু দিয়ে শুরু করা লাভজনক?

খামার শুরু করার কয়েকটি প্যাকেজ আছে। যথাঃ 

১. বাছুরসহ গাভী। 

২. বাছুরসহ গাভী ও বকনা বাছুর 

৩. বকনা বাছুর

৪. ষাড় বাছুর ও বকনা বাছুর

৫. ষাড় বাছুর ও বাছুরসহ গাভী।

৬. ষাড় বাছুর, বাছুরসহ গাভী ও বকনা বাছুর 

একজন অনভিজ্ঞ খামারি হিসেবে কোন প্যাকেজটি আপনার জন্য লাভজনক হবে আপনাকে তা জানতে হবে। 

তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে আপনি যদি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের গাভীর খামার করতে চান তাহলে আমার পরামর্শ ৪ নং প্যাকেজ নিয়ে শুরু করুন।

আপনার পরিকল্পনা যদি হয় ১০ টি গাভী দিয়ে শুরু করা তাহলে আমার মতামত-  

ধরুন আপনি জানুয়ারী মাসে খামার শুরু করলেন। আপনি ১২ মাস বয়সী ২ টি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের বকনা বাছুর কিনুন যার ক্রয়মূল্য হবে ১,৬০,০০০- ২,০০,০০০  টাকা। তারপর মোটাতাজা করনের উদ্দেশ্যে ৮ টি ষাড় বাছুর কিনুন। প্রতিটি ৩০,০০০ হাজার টাকা মূল্যের ২ টি, প্রতিটি ৪০,০০০ হাজার টাকা মূল্যের ২ টি, প্রতিটি ৫০,০০০ হাজার টাকা মূল্যের ২ টি, প্রতিটি ৬০,০০০ হাজার টাকা মূল্যের ২ টি এভাবে মোট ৮ টি ষাড় বাছুর কিনুন ৩,৬০,০০০ টাকা দিয়ে। প্রতিটি ৬০ হাজার টাকা মূল্যের গরু ২ টি ৩ মাস লালন পালন করে মার্চের শেষে বিক্রি করে ফেলুন। বিক্রির টাকা দিয়ে আপনি ১২ মাস বয়সী ২ টি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের বকনা বাছুর কিনুন যার ক্রয়মূল্য হবে ১,৬০,০০০- ২,০০,০০০  টাকা। হয়তো  বকনা কেনার পর আপনার কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকতে পারে। আবার আপনি কিছু টাকা বিনিয়োগ করাও লাগতে পারে। প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুগুলো ৬ মাস লালন পালন করে জুনের শেষে বিক্রি করে ফেলুন এবং বিক্রির টাকা দিয়ে আপনি ১২ মাস বয়সী ২ টি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের বকনা বাছুর কিনুন যার ক্রয়মূল্য হবে ১,৬০,০০০- ২,০০,০০০  টাকা। এবার গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বকনা কেনার পরেও আপনার হাতে অবশিষ্ট থাকবে। অর্থাৎ ৬ মাসের মাথায় আপনি সকল খরচ বাদ দিয়ে সামান্য হলেও লাভের মুখ দেখবেন। প্রতিটি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুগুলো ৯ মাস লালন পালন করে সেপ্টেম্বরের শেষে বিক্রি করে ফেলুন। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে আপনি ১২ মাস বয়সী ২ টি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের বকনা বাছুর কিনুন যার ক্রয়মূল্য হবে ১,৬০,০০০- ২,০০,০০০  টাকা। এবারো গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বকনা কেনার পরেও আপনার হাতে অবশিষ্ট টাকা থাকবে। এবার প্রতিটি ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা গরুগুলো ১২ মাস তথা ১ বছর লালন পালন করে ডিসেম্বরের শেষে বিক্রি করে ফেলুন। গরু বিক্রির টাকা দিয়ে আপনি ১২ মাস বয়সী ২ টি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের বকনা বাছুর কিনুন যার ক্রয়মূল্য হবে ১,৬০,০০০- ২,০০,০০০  টাকা। এবারো গরু বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বকনা কেনার পরেও আপনার হাতে অবশিষ্ট টাকা থাকবে।


জানুয়ারী মাসের শুরুতে আপনার খামারে গরু ছিল ১০ টি, মূলধন ছিল ৫,২০,০০০-৫,৬০,০০০ টাকা । ডিসেম্বরের শেষে আপনার খামারে গরু ১০ টি এবং মূলধনের পরিমান ৮,০০,০০০-১০,০০,০০০ টাকা। এই নতুন পুঁজির মধ্যে আপনার পুরাতন পুঁজি ৫,২০,০০০ টাকা,  মাসে মাসে খামার পরিচালনার খরচ ও সামান্য লাভের টাকা থাকতে পারে।

আপনি কিন্তু  শুরুতে ১০ টি হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের বকনা বাছুর কিনে বছর শেষে আপনার মূলধন ১০,০০,০০০ টাকা করতে পারবেন। পাশাপাশি বছর শেষে সবগুলো গরু বাচ্চা দিলে আপনি দুধ বিক্রি শুরু করে দিতে পারতেন এবং বাছুরগুলো আস্তে আস্তে বড় হতো। তবে এভাবে করতে গেলে কিছু অসুবিধার কথা না বললেই নয়।

১. শুরুতে পুঁজি লাগতো ১০,০০,০০০ টাকা।

২. ১ বছর আপনাকে খাবারের যোগান দিতে হত। খাবার কেনা, কৃমি নাশক ঔষধ, টিকা এসব নিয়ে আপনাকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে

৩. সবগুলো যদি প্রায় একই বয়সের বকনা হয় একসাথে বাচ্চা দিবে। দুধ উৎপাদন বেশি হবে। আবার একটা পর্যায়ে ৩-৪ মাস খামারে কোন দুধ উৎপাদন হবেনা। কারন গাভীগুলো একসাথে ড্রাই পিরিয়ডে চলে যাবে।

৪. একসাথে ১০ টি বকনা বাছুর কিনতে গেলে ১ -২ টি বকনা ভালো জাতের নাও হতে পারে।

৫. অন্য খামার থেকে গাভী কিনে আপনার খামারে আনলেন। স্থান পরিবর্তনের কারণে দুধ উৎপাদন কমে যাবে। দুধ দোহনকারীর পরিবর্তন, জার্নি করা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে দুধ উৎপাদন কমে যায়। অন্য খামারে  ১৫ লিটার দুধ দেওয়া গাভী আপনার খামারে এসে ১০ লিটার দুধ দিলে এতে অবাক হবার কিছু নাই।

৫. অন্য খামার থেকে গাভী কেনার সময় খামারি তার কর্মচারী দিয়ে দুধ দোহন করলো। ঐ কর্মচারীকে লাথি দেয়নি। কিন্তু আপনি বাড়িতে আনার পর দুধ দোহন করার সময় আপনাকে লাথি দিচ্ছে। একদিন দুইদিন পর আপনি বিরক্ত হয়ে বিক্রি করতে গেলেন। কম দামে বিক্রি করলেন। আবার নতুন গাভী নির্বাচন, সময় বের করে আনা,হাটে যাওয়া, গাভী কেনা এই ধরনের প্যারা আপনাকে নিতে হবে।

৫. এই পদ্ধতি অনুসরন করে খামার করলে ঝুঁকি থাকে অনেক।যদি ভাগ্য ভালো হয় প্রথম মাস থেকে খামারকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন। ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়।

৭. যাদের হার্টের প্রবলেম আছে তারা এই পদ্ধতি অনুসরন করে খামার করবেন না। এখানে প্রতিনিয়ত টেনশান আর টেনশান। তবে আপনি চাইলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের  গাভী বাদ দিয়ে দেশী জাতের গাভী দিয়ে খামার করতে পারেন। হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের গাভী অনেকটা ফার্মের ব্র‍য়লার মুরগীর মত। 

নেপিয়ার ঘাসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা এইখানে ক্লিক করুন। 

৪ নং প্যাকেজের সুবিধা

১. শুরুতে পুঁজি তুলনামূলক কম লাগে।

২. যেহেতু ৩ মাস পরপর কেনা হয় আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেখে শুনে যাছাই বাছাই করে বকনা বাছুর কেনা যায়।

৩. সবগুলো বকনা একই বয়সের নয় বিধায় ৩ মাস পরপর বাচ্ছা পাওয়া যাবে। খামারে সব সময় দুধ উৎপাদন হবে। দুধ বিক্রি করে খামারের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা যাবে। ১ বছর পর খামারে অতিরিক্ত পুঁজি বিনিয়োগ করা লাগবেনা। 

৪. ৩ মাস আগের কেনা গরুর অভিজ্ঞতা ৩ মাস পরে কেনা গরুর মধ্যে প্রয়োগ করা যাবে। ফলে লস হবার সম্ভাবনা কমে যাবে।

৫. আপনার খামারে জন্ম নেওয়া বাছুরের ৫০% বকনা আর ৫০% ষাড় বাছুর হবে।যেহেতু আপনি শুরুতে ষাড় বাছুর লালন পালন করেছেন সেহেতু আপনার পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে খামারে জন্ম নেওয়া ষাড় বাছুরকে মোটাতাজা করতে আপনি সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।

৬. দীর্ঘদিন আপনি প্রতেকটি বাছুরকে লালন পালন করলে তাদের খাদ্যাভ্যাস, বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। দেখা যায় খুব কম সংখ্যক হলোস্টিয়ান ফ্রিসিয়ান জাতের  গাভী আছে যারা দুধ দোহন করতে গেলে লাথি মারে। আপনি যেহেতু দীর্ঘদিন যাবত যত্ন করে লালন পালন করবেন, খাওয়াবেন, গায়ে হাত বুলিয়ে দিবেন আপনার সাথে একটা সম্পর্ক তৈরী হবে। ফলে দুধ দোহন করতে গেলে আপনাকে লাথি নাও দিতে পারে। যদিও এখন বাজারে এন্টি কিক বার নামক লোহার ডিভাইস পাওয়া যায় যা ব্যবহার করলে গরু লাথি দিতে পারেনা।

৭. এই পদ্ধতিতে খামার করলে ঝুঁকি কম থাকে এবং মোটামুটি ১৮ মাসের মাথায় আপনি খামারকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন।


Post a Comment

0 Comments