স্বাদ,মিষ্টতা, লাভের কথা চিন্তা করলে অন্য জাতের আমের চেয়ে কাটিমন আম কয়েক ধাপ এগিয়ে।বাগানকে লাভজনক করতে হলে এই আম সম্পর্কে আম বাগানির প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য।
কাটিমনের আমের বৈশিষ্ট্য
১. সারা বছর আম পাওয়া যায়।
২. থাইল্যান্ডের এই জাতের আমের মিষ্টতার পরিমান ২৪ টিডিএস।
৩. পাকলে গাঢ় হলুদ বর্ণ হয় এবং আটিঁ খুবই পাতলা।
৪. চামড়া ভারি তাই পোকার আক্রমণ কম।
৫. অফ সিজনে ফলন হয় তাই দাম বেশি পাওয়া যায়।
৬. হাই ডেনসিটিতে চারা রোপন করা যায়।
৭. কলম চারা প্রস্তুত করা যায় এবং রোপনের ৯ মাসের মাথায় ফুল আসে।
৮. গাছ থেকে পাকা আম পারার ২০ দিনের মধ্যে আম পঁচেনা।
৯. রপ্তানিযোগ্য আম।
১০. আধাপাকা অবস্থায় হারভেস্ট করলে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
১১. দূরে পরিবহন করলে আম নষ্ট হয়না।
আম বাগানে চারা রোপন করার আগে গরু ছাগল থেকে রক্ষা করার জন্য বেড়া দিতে হবে। আপনার বাজেট অনুযায়ী বেড়া দিতে পারেন। ৬ মাস, ১ বছর, ৫-১০ বছর মেয়াদি বেড়া দিতে পারেন। আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে গরু ছাগল যেন ক্ষতি করতে না পারে।
জমি প্রস্তুত
জমিকে উত্তমরূপে ২-৩ বার চাষ করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তারপর ১০ ফুট অন্তর অন্তর গাছ রোপনের জন্য ১৫ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট ১ ফুট গভীর করে গর্ত করতে হবে। গর্তের মাটি ২ ভাগ করে ১ ভাগ মাটিতে ১৫-২০ কেজি জৈব সার ও ২০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ২০ গ্রাম পটাশ, ১০ গ্রাম বোরন ভালোভাবে মাটির সাথে মিক্স করে গর্তটি ভরাট করে দিতে হবে।বাকি ১ ভাগ মাটি গর্তটির চারপাশে উঁচু করে লাইল দিতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি দিলে পানি বের হয়ে যেতে না পারে। তারপর গর্তটি খড় বা কচুরিপানা বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।এভাবে ১ মাস রেখে দিলে মাটির সাথে সার, জৈব সার ভালোভাবে মিক্স হবে এবং সার থেকে উৎপন্ন গ্যাস চলে যাবে।
আল্ট্রা হাই ডেনসিটি পদ্ধতি কি?
আল্ট্রা হাই ডেনসিটি পদ্ধতি হচ্ছে অধিক ঘনত্বে চারা রোপন করা।সব জাতের আমের চারা আল্ট্রা হাই ডেনসিটি পদ্ধতিতে রোপন করা যায়না। যেসব আম গাছের ডালের মধ্যে এক গিঁট থেকে অন্য গিঁটের দূরত্ব খুবই কম সেসব আমের চারা এই পদ্ধতিতে রোপণ করা যায়। কাটিমন জাতের আম গাছ আল্ট্রা হাই ডেনসিটি পদ্ধতিতে রোপনের উপযোগী। এই পদ্ধতিতে একটি চারা থেকে অন্য একটি চারার দূরত্ব হবে ৫-৬ ফুট এবং এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ১০-১২ ফুট।
চারা নির্বাচন
কাটিমন জাতের আমের বাগান করার জন্য ছোট চারা রোপন করা উত্তম। তবে খেয়াল রাখতে হবে ছোট চারার মধ্যে গ্রাফটিং এর পলিথিন বা টেপ আছে কিনা।১-২ মাস পরে গাছ শক্ত হয়ে গেলে গ্রাফটিং করার সময় পলিথিন বা টেপ সূক্ষভাবে খুলে দিতে হবে। নতুবা গাছ একটু বড় হলে ভেঙ্গে যাবে। ছোট চারার মৃত্যু হার কম। ডাল-পালা বিশিষ্ট চারা নির্বাচন করবেন না।
রোপন পদ্ধতি
চারা রোপন করার সময় চারার সাথের মাটি যেন জমির সাথে সমান্তরাল থাকে। চারার সাথের মাটি যেন জমির মাটির লেবেলে থাকে। চারা রোপন করার সাথে সাথে শক্ত একটি খুঁটি চারার সাথে বেধেঁ দিবেন। ফলে বাতাসে চারার গোড়ার মাটি আলগা হবেনা।
সাথি ফলসঃ
হাই ডেনসিটি পদ্ধতিতে কাটিমন আমের সাথে ১ বছর পর্যন্ত সাথি ফসল রোপণ করতে পারবেন। চারা থেকে চারার দূরত্ব বেশি দিলে ২ বছর পর্যন্ত সাথি ফসল রোপণ করতে পারবেন।
সেচ প্রয়োগ
সাধারণত মাটি শুকনো- ভেজার উপর নির্ভর করে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু যখন মুকুল আসার সময় হয় তখন ইউরিয়া ও পানি দেওয়া যাবেনা। মুকুল আসার ২০-২৫ দিন আগে পানি দেওয়া যাবেনা। যদি পানি দেওয়া হয় তাহলে মুকুলের পরিবর্তে কচি পাতা বের হবে।
প্রুনিং
প্রুনিং হচ্ছে গাছের ডাল ছাটাই করা।কাটিমন আমের জন্য প্রুনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।প্রুনিং করলে ডালের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মনে রাখবেন যত বেশি ডাল তত বেশি আমের ফলন আসার সম্ভাবনা। তাই প্রুনিং করে আম গাছকে ঝোপালো করে দিতে হবে। এতে আমের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং গাছকে পরিচর্যা করা সহজ হয়। তাছাড়া আম গাছকে প্রুনিং করে যদি ম্যান হাইটের (৬-৬.৫ ফুট) মধ্যে রাখা যায় তাহলে গাছ সঠিক পরিচর্যা পায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আম গাছকে ছাটাই করে ম্যান হাইটের মধ্যে রাখা প্রায় অসম্ভব। প্রথম বাধা বাগানিদেরকে বুঝানো যাবেনা। অথচ গাছ ম্যান হাইটের মধ্যে থাকলে পোকামাকড় দমন সুবিধা, ওষুধ স্প্রে সুবিধা, ব্যাগিং করা ও হারভেস্ট করা সহজ হয়। শ্রমিক কম লাগে।
মুকুল আসার আগে পরিচর্যা
মুকুল আসার ১ মাস আগে গাছের গোড়ায় বা বাগানে সেচ দেওয়া যাবেনা। এই সময় সেচ দিলে ১ মাস পরে যেখানে মুকুল আসার কথা সেখানে কচি পাতা বের হবে।এই সময় হপার পোকা দমনের জন্য কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
মুকুল আসার পরে পরিচর্যা
মুকুল ফোঁটার আগে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। মুকুল ফোঁটার পর কোনভাবেই ছত্রাকনাশক স্রে করবেন না।এতে মুকুলের মধ্যে পরাগায়নের বাহক বিভিন্ন পোকা মারা যাবে। পরাগায়ন না হলে ফুল থেকে আম হবেনা।
আম যখন গুঁটি আকার ধারন করবে তখন আপনি ছত্রাকনাশক, বোরন, ফ্লোরা স্প্রে করবেন। ১ম স্প্রে করার ১৫ দিন পর আবার বোরন, ফ্লোরা স্প্রে করবেন। এভাবে স্প্রে করলে ঝড়, বৃষ্টিপাতে গুঁটি আম ঝরে পরার হার কমে যায়।
আম ব্যাগিং
আম হারভেস্ট করার ২ মাস আগেই আমে ব্যাগিং করে ফেলুন। ব্যাগিং করলে আমে দাগ পড়েনা, পোকা আক্রমণ করতে পারেনা, কালার সুন্দর হয় ফলে ভালো দামে বিক্রয় করা যায়।
আম হারভেস্ট
আমের ন্যাচারাল স্বাদ পেতে হলে আমকে গাঢ় হলুদ বর্ণ ধারণ করার সময় দিন। তারপর হারভেস্ট করুন। তবে বাজারজাতকরণের কথা মাথায় রেখে ৫০% হলুদ এবং ৫০% হালকা হলুদ এ অবস্থায় হারভেস্ট করতে পারবেন।
আপনি কি দৈনিক ২-৩ ঘন্টা সময় দিয়ে বিনামূল্যে SEO শিখে মাসে ২০,০০০ টাকা আয় করতে চান?
1 Comments
Hey!Omar i regulair read your blog. You blog are very informational and interesting.
ReplyDeleteSo thank you very much for your friendly blog writing.